Health

৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন । Health Tips 2023

বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন ।

5/5 - (37 votes)

সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস আমাদের সবার কাছেই খুবই পরিচিত একটি শব্দ। আজকে আমরা জানবো মাত্র ৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বিশ্বজুড়ে ভয়ানক ঘাতকের মত হায়েনার থাবা বসিয়েছে প্রাণঘাতী  ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস জিনগত হলেও টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা সবচাইতে বেশি।বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর ৯৭ শতাংশই টাইপ-২।বর্তমানে এ দেশে এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব, যে পরিবারে কোনো ডায়াবেটিস রোগী নেই। জীবনযাত্রার অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর খাবার ,শরীরচর্চার অভাব ও অনিদ্রা  এই রোগের মূল কারণ। আমাদের অজান্তেই ডায়াবেটিস প্রভাপ ফেলে আমাদের কিডনি, হার্ট, চোখ, লিভারের মত গুরুত্বপূর্ণ দেহঅঙ্গে। ডায়াবেটিস হলে আক্রান্ত বাক্তির দেহে যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদনে অক্ষম হয়ে পড়ে। ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। আর যে কারণে পরবর্তীতে কোনও শারীরিক জটিলতা হলে বা অসুস্থ হলে এবং শারীরিক অবস্থা কঠিন হলে মাল্টি অর্গ্যান ফেলিওয়ের সম্ভাবনা থাকে।

চলুন জেনে নিই ডায়াবেটিস রোগের লক্ষন সমূহ : 

৭২ ঘণ্টায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন ।

  • ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা।
  • অস্বাভাবিক হারে ওজন কমে যাওয়া।
  • বমি বমি ভাব ও মাঝে মধ্যে মাথা ব্যথা করা।
  • অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয।
  • মিষ্টি খাবারের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হওয়া।
  • চোখে ঝাপসা দেখা।
  • তৃষ্ণা বৃদ্ধি পাওয়া।
  • বার বার প্রসাবে যাওয়া।
  • মুখ শুকিয়ে যাওয়া।

ডায়াবেটিস কখনও পুরোপুরি ভালো হয় না। তবে এর লক্ষণগুলো মাত্র ৭২ ঘণ্টায় দূর করা যায় এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এ জন্য বড় কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন নেই। দেহে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের সহজ কিছু টিপস আছে। আশা করি নিয়মিত এগুলো মেনে চললে আক্রান্ত বাক্তিরা  নিজেরাই শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।

) নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করুন : 

নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে একটি মাঝারি ওজন ও সুস্থ জীবন পেতে এবং সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। দ্রুত হাঁটাচলা, ভার উত্তোলন, দৌড়ানো, নাচ, হাইকিং, সাইকেল চালানো, এবং সাঁতার কাটা, ইত্যাদি ব্যায়ামগুলো করলে আপনি যেমন থাকবেন প্রাণবন্ত ঠিক তেমন ডায়াবেটিস থাকবে নিয়ন্ত্রণে। উপরোক্ত ব্যায়ামগুলোর মধ্যে একটি সহজ ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটাহাঁটি করা। প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটবেন। এটি দেহে ইনসুলিন মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়া নিয়মিত হাঁটলে আপনার শরীরে এক অন্য লেবেলে এনার্জি বুস্ট হবে যা আপনি নিজে উপলব্ধি করবেন।

) প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে চিনি শর্করা জাতীয় খাবার বাদ দিন ও ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া বাড়ান।

সবুজ চা (গ্রিন টি)

সবুজ চা দৃশ্যত দেহে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে, যা প্রত্যক্ষভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এটির কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার, স্মৃতিশক্তির উন্নতি, হার্টঅ্যাটাক, রক্তচাপ  নিয়ন্ত্রণ করতে এটি যাদুর মত কাজ করে।

চর্বিযুক্ত মাছ

সামুদ্রিক মাছে আছে অতি উচ্চ মাত্রার প্রোটিন এবং এতে ক্ষতিকারক চর্বি ( ফ্যাট ) প্রায় নেই বললেই চলে। প্রজাতি ভেদে সামুদ্রিক মাছের স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে কিন্তু স্বাস্থ্য উপকারিতা দিক থেকে বিবেচনা করলে সব সামুদ্রিক মাছই প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরা। সামুদ্রিক মাছে আছে উচ্চ মাত্রায় ওমেগা-৩ ফ্যাট, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন এ। যা ডায়াবেটিস নামক ঘাতক রোগ থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। এর মাধ্যমে কেবল ডায়াবেটিস এর উপকারই পাবেন না। বরং এটি দেহে অন্যান্য অনেক সমস্যা থেকে রক্ষা করে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে, যার কারণে আপনি হার্টজনিত সমস্যা থেকেও দূরে থাকেন। সামুদ্রিক মাছগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে। এই ফাইবারটি আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

মটরশুঁটি

মটরশুটি আমাদের অনেকেরই পছন্দের একটি সবজি। মটরশুটি খুব পুষ্টিকর খাদ্য। এই সবজিতে বেশ ভালো পরিমাণে তন্তু থাকায় পেট পরিস্কার রাখে ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। এটি বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্বাদ বাড়াতেও ব্যবহার করা হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম মটরশুটি থেকে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া এতে কার্বোহাইড্রেট তাকে ১৪.৫ গ্রাম, ফ্যাট ০.৫ গ্রাম ও প্রোটিন পাওয়া যায় ৫.৪ গ্রাম। এছাড়া ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড, বিটাক্যারোটিন, ভিটামিন এ, ফসফরাস, জিঙ্ক, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স থাকে এবং সামান্য পরিমাণে ভিটামিন কে-ও থাকে মটরশুটিতে।মটরশুটি দেহে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে এই সবজি দারুণ কাজ করে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করতে সহয়তা করে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা মটরশুটি খেতে পারেন।  এছাড়া এটি শরীরে হাড় শক্ত করতেও খুব ভালো।

টকদইঃ 

দেহের অতিরিক্ত ওজন আমাদের অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই অতিরিক্ত ওজনের জন্য আমাদের শরীরে নানা রোগের উৎপত্তি হয়। অতিরিক্ত ওজনের কারনে দেহে ডায়াবেটিস বাসাবাধতে পারে। কিন্তু টক দই খেলে আপনি খুব সহজেই বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন। টক দই শরীরের ফ্যাট বার্ন করে বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও টক দইয়ের নিজেই হজম হতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে। তাই ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার না খেয়ে টক দই খেলে অধিক সময় পর্যন্ত পেট ভরে থাকে এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে আপনাকে বিরত রাখবে।টক দই এ ফ্যাট না থাকায় টক দই আমাদের খারাপ কোলেস্টেরল কে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া এতে রয়েছে ফসফরাস, প্রয়োজনীয় ফ্যাট, রাইবোফ্লাভিন, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-বি১২ সহ প্রয়োজনীয় নানা উপাদান।

শাকসবজি

আমদের দেশ বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। সারা বছর ধরে এ দেশে নানা ধরনের শাকসবজি উৎপাদন হয়। আল্লাহর দান ও প্রকৃতির এই নেয়ামতকে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে কাজে লাগিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা ও প্রতিরোধ করা যায়।

ডায়াবেটিস রোগীর সুবিধার জন্য শাকসবজিকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন-

১। শর্করা সম্বলিত সবজি যেমনঃ

আলু, কাঁচা কলা, মিষ্টি কুমড়া, শিম, মাটির নীচের কচু, গাজর, কাঁকরোল, শিমের বিচি, বরবটি, থোড়, মোচা, বিট, কাঁঠালের বিচি, শালগম, ইঁচড়, ঢেঁড়স, বেগুন, মটর শুঁটি, কচুরমুখী, পাকা টমেটো।

২। শর্করাবিহীন শাকসবজি যেমনঃ

 সব ধরনের শাক ( লতাপাতা ), যেমন- লালশাক, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, কচুশাক , পালংশাক, কলমিশাক ইত্যাদি এবং সবজি যেমন  ওলকপি, কাঁচা টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা,  , সজনা, ধন্দুল, ক্যাপসিকাম, কাঁচামরিচ, মাশরুম , কাঁচা পেপে, শসা, খিরা, করলা, ঝিঙা, চিচিঙা, পটোল, লাউ, চালকুমড়া, ডাঁটা ইত্যাদি।

এছাড়া করলা ( উস্তে ) যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য যাদুর মত কাজ করে। করলার জুস সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক উপকারী। এছাড়া সকালের নাস্তাতে করলা ভাজি খেতে পারেন। করলাতে যে প্রচুর  পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে তা শরীর সুস্থ রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে যা করনীয়ঃ

১) সকল ধরনের ফাস্টফুড পরিহার করা।

ফ্রাইস, পিজ্জা, বার্গারের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে স্থূলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল হয় এবং খাদ্য হজমে সমস্যা হয় এছাড়া ঘাতক হৃদরোগের মতো নানা ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে দেহে। এসব খাবার দেহে ইনসুলিনের মাত্রায়ও ক্ষতিকরভাবে হেরফের ঘটিয়ে দিতে পারে, যা থেকে ডায়াবেটিস এর জন্ম হতে পারে। তাই আমাদের সবার উচিৎ এসব অস্বাস্থকর খাবার এড়িয়ে চলা।

২) মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকাঃ

টেনশন বা মানসিক চাপ আমাদের দেহের অনেক বড় ক্ষতির কারন। মাথাব্যথা থেকে শুরু করে মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগও হতে পারে অতিরিক্ত মানসিক চাপ থেকে। তাই মানসিক চাপ থেকে নিজেকে সবসময় মুক্ত রাখুন। এতে করে আপনার দেহে কর্টিসোল হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাবে।

পরবর্তী পোস্ট

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button